নিজের সম্পর্কে বলা
মৌখিক পরীক্ষায় এটা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করা হয়। পরীক্ষার আগে এটির উত্তর গুছিয়ে রাখুন। যেকোনো ভাইভার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, আপনার একাডেমিক শিক্ষাকে কীভাবে চাকরিতে ব্যবহার করবেন। যেমন আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কৃষিতে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কীভাবে অবদান রাখবেন? পাশাপাশি আপনার পঠিত বিষয় ও স্নাতকের গবেষণার বিষয়ের যেসব প্রশ্ন হতে পারে, সেগুলোর উত্তরও জেনে রাখার চেষ্টা করবেন।
নিজ এলাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়–সম্পর্কিত
ভাইভা বোর্ডে কখনো কখনো কিছু সাধারণ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। যেগুলো না পারা লজ্জাজনক। তেমন কিছু প্রশ্ন হলো নিজ জেলা বা এলাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ সম্পর্কে জানা। তাই নিজ এলাকার কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, নদ–নদী, প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান, পর্যটনকেন্দ্র ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখুন। পাশাপাশি আপনার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কেও জেনে নিন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদিতে নিজ এলাকার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ঘটনা থাকলে তা জেনে রাখুন। যেমন আপনার এলাকা মুক্তিযুদ্ধের কত নম্বর সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিল? খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম? ইত্যাদি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ কী কী? বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালকের কাজ কী কী? বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের নাম ও কাজ, আপনার পঠিত বিষয়–সম্পর্কিত যদি কোনো বিভাগ থাকে, সেই বিভাগ সম্পর্কেও জেনে রাখবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে বর্তমান সময়ের অর্থনীতিবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য যেমন ব্যাংক রেট, রেপো রেট, রিভার্স রেপো রেট, এসএলআর, সিআরআর, আমানতের হার, বর্তমান সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি রেট ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে পারেন।
ব্যাংক খাত সম্পর্কে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক, নন–তফসিলি ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ইত্যাদির সংখ্যা, সাধারণ কাজ ও বিশেষ কাজ সম্পর্কে জানুন। ব্যাংকিং–সম্পর্কিত বিভিন্ন টার্ম যেমন কল মানি, ব্যাংক রেট, ব্যাংক নোট, ট্রেজারি বিল, বন্ড, সিআরআর, এসএলআর, লোন, মর্টগেজ, আমানত, সুদ, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, চেক, পিও, আরটিজিএস, ক্লিয়ারিং, মানি লন্ডারিং, বিএফআইইউ, অ্যাগ্রি ক্রেডিট, এসএমই, এলসি, বিল, বিওপি, এমএফএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দেশগুলোর অর্থনীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম, গভর্নরের নাম, মুদ্রার নাম জেনে রাখতে পারেন।
আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড যেটাই হোক, ব্যাংকের ভাইভা বোর্ডে যাওয়ার আগে অর্থনীতির কিছু মৌলিক বিষয় যেমন জিডিপি, জিএনপি, রিজার্ভ, মনিটরি পলিসি, ফিসক্যাল পলিসি, বাজেট, মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রা সংকোচন, মানি মাল্টিপ্ল্যায়ার, ব্রড মানি, ন্যারো মানি, মানি মার্কেট, ক্যাপিটাল মার্কেট, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিময় হার, চাহিদা, জোগান, আমদানি-রপ্তানি এগুলো সম্পর্কে পড়াশোনা করুন। এ ছাড়া দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত ও উপখাত সম্পর্কে ধারণা রাখুন। দেশের বিগত পাঁচ বছরের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ডেটা যেমন মাথাপিছু আয়, জিডিপিতে বিভিন্ন খাতের অবদান, দারিদ্র্যের হার, চরম দারিদ্র্যের হার, নন–পারফর্মিং লোন, ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট, রিজার্ভ, আমদানি ও রপ্তানি ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে পারেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন অর্থনৈতিক জোন, মেগা প্রজেক্ট, আইসিটি খাতের সাফল্য, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট, ব্লু ইকোনমি ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখুন।
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভাইভায় বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন করা হয়। তাই এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান, প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নাম, কাজ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পর্ক বা চুক্তি থাকলে সে বিষয়েও ধারণা রাখবেন। যেসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন, সেগুলো হলো বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ, আইডিবি, ইইউ, ডব্লিউটিও, ওপেক, এপেক, আকু, জি-৭, জি-২০, নাফটা, সার্ক, জিসিসি, আসিয়ান ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে ধারণা থাকা আবশ্যক।
সাম্প্রতিক
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক ইস্যু সম্পর্কে জেনে রাখুন। এসব ইস্যু অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা আয়ত্তে রাখুন। যেমন মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করছে, সেসব বিশদ পড়ে নিতে হবে।
আরও কিছু
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। ভাইভা অভিজ্ঞতা–সংবলিত যেকোনো একটি বই সংগ্রহ করে নিয়মিত পড়াশোনা করুন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন তথ্য নোট নিতে পারেন। প্রতিদিন অন্তত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রাখুন এবং সেখান থেকে বাংলাদেশ ও বিশ্ব অর্থনীতি–সম্পর্কিত নিউজ এবং সম্পাদকীয় পাতা পড়ুন, যা আপনাকে অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একটি সুন্দর ভাইভা দিতে সাহায্য করবে।
যথাযথ পোশাক পরে এবং ভাইভা বোর্ডের ভেতরে প্রবেশের আগে অনুমতি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করুন। অনুমতি দেওয়ার পর বসুন অথবা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর নিজেই বসার জন্য অনুমতি চাইবেন। বসার পর ধন্যবাদ জানাবেন। বসার পর নিজেকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ও বিনয়ীভাবে উপস্থাপন করবেন। এটা ভাইভামাত্র, হারানোর কিছু নেই। উত্তর দেওয়ার সময় বাড়তি কথাবার্তা বলবেন না। কারণ, আপনার দেওয়া উত্তরের ওপর সাধারণত পরবর্তী প্রশ্ন নির্ভর করে। যিনি প্রশ্ন করবেন, তাঁর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। সম্পূর্ণ প্রশ্ন শোনার পর উত্তর দিন। বাংলায় প্রশ্ন করা হলে বাংলায় উত্তর দিন। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী চেহারায় মৃদু হাসি ভাব রাখুন। কোনো প্রশ্নের উত্তর না জেনে থাকলে বিনয়ের সঙ্গে বলুন—সরি স্যার, বিষয়টি আমি জানি না বা এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না।
মনে রাখবেন, আপনি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না। তাই নিজেকে কখনোই সেভাবে উপস্থাপন করবেন না। ভাইভা শেষে একটু পেছনে সরে এসে ধন্যবাদ স্যার বলে ধীরগতিতে কক্ষ ত্যাগ করুন। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখুন, সাফল্য ধরা দেবে।
0 Comments:
Post a Comment